দূর প্রবাসে ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তোলা এক টুকরো স্বপ্ন রাতের আঁধারে আগুনে ভস্মীভূত হলো। গৌরনগর ব্লকের রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল গভীর রাতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন ভাই;আক্তার আলী, সাদিক আলী ও করিম আলীর বসতবাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। আগুন শুধু তাদের ঘরই গ্রাস করেনি, গ্রাস করেছে তাদের পরিশ্রম, তাদের ভালোবাসার সম্বল, এবং তাদের আগামীর স্বপ্ন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে সবাই গভীর ঘুমে ছিল। হঠাৎ আগুনের ভয়ানক শিখা চোখে পড়তেই আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ততক্ষণে আগুন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। কেউ কিছুই বের করতে পারেননি;নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এমনকি বিদেশে যাওয়ার পাসপোর্ট ও ভিসাও পুড়ে গেছে।
সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, পরিবারের ছোট ভাইয়ের চারদিন পর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের প্রস্তুতির জন্য ঘরে রাখা নগদ টাকা ও সোনার অলংকারও আগুনে পুড়ে যায়। একদিকে সর্বস্ব হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে আগত বিয়ের শূন্যতা;এ যেন একসঙ্গে দুই শোকের ভার বইতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু আগুনের প্রচণ্ড তাপে ঘরের কাছে যাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পর দমকল বাহিনী আসে, তবে ততক্ষণে ঘরের প্রতিটা কোণা ছাই হয়ে গেছে। স্বপ্নগুলো পোড়ার গন্ধ তখন পুরো গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
এখনও স্পষ্ট নয় আগুন ঠিক কীভাবে লাগল। কেউ বলছেন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে দুর্ঘটনা, আবার কেউ সন্দেহ করছেন এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। যদি এটি দুর্ঘটনা না হয়, তবে কারা এর পেছনে আছে? কেন একটি পরিবারকে এক নিমেষে নিঃস্ব করে দেওয়া হলো? এসব প্রশ্ন স্থানীয়দের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান বলেন, তএই পরিবারটি দরিদ্রতা থেকে উঠে আসার জন্য কতটা পরিশ্রম করেছে, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই আগুন তাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। সরকার যেন দ্রুত তাদের পাশে দাঁড়ায়, যাতে তারা আবার মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।দ
স্থানীয় প্রশাসন ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই ঘটনাটি পর্যালোচনা করছে এবং পুনর্বাসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সরকার যদি দ্রুত আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়, তবে অন্তত কিছুটা হলেও তাদের কষ্ট লাঘব হতে পারে।
আগুনের ছাইয়ের নিচে পড়ে আছে তিন ভাইয়ের ভালোবাসার ঘর, তাদের কষ্টের ফসল, তাদের সুখের স্মৃতি। এখন একটাই প্রশ্ন;তারা কীভাবে আবার নতুন করে শুরু করবে? তারা কি আবার প্রবাসে ফিরে যাবে? নাকি সমাজের কেউ তাদের জন্য এগিয়ে আসবে?
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারের বিপর্যয় নয়, এটি সমাজের জন্যও এক অশনিসংকেত। আগুন নিভে গেছে, কিন্তু পোড়া ঘর, পোড়া স্বপ্ন, আর পোড়া ভবিষ্যতের গন্ধ এখনোবাতাসেভাসছে।