এতদিন কমিশণ বাণিজ্য ঠিকেদারি ব্যবসায় সীমাবদ্ধ ছিল। তা গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে মানুষের জীবন সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্থ করে অতি লোভ ও লাভের বাণিজ্যে। পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে নদীর বালি অন্যতম জরুরী প্রয়োজনীয় সামগ্রী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বনদপ্তরের নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। বালি সংগ্রহের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। নদীর পাড়ে বাঁধ জল সম্পদ দপ্তরের অধীন। সেই বাঁধ ব্যবহারেও দপ্তরের সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও আইন রয়েছে। সেজন্য দপ্তরগুলোর অনুমোদন নিতে হয়। নিতে হয় একারণে যাতে নদীর পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়। বালি সংগ্রহের জন্য বন দপ্তর থেকে অনুমোদনপত্র নিতে হয়। কৈলাসহর বনদপ্তরে বর্তমানে মাত্র দুটি অনুমতিপত্র আছে । এর মধ্যে একটি নবীকরণ হলেও অন্যটির নবীকরণ হয়নি। যেহেতু নবীকরণ হয়নি সেইহেতু এই সংগ্রহকারীর বালি সংগ্রহ অবৈধ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এখানে দুর্গাপুর সহ চণ্ডীপুর এলাকায় ১০ টি বালির খাদান রয়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি ভাড়ি গাড়ি বালি বোঝাই করে মনু নদীর বাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত করছে।
২০২২ সালে তৎকালীন জেলা শাসক ড. বিশাল কুমার এক বালি মাফিয়ার গাড়ি সহ জেসিপি বাজেয়াপ্ত করার পর স্পর্শকাতর স্থান থেকে বালি তোলা বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর নতুন নতুন নেতা গজিয়ে ওঠার পর নতুন উদ্যোমে ব্যাপকভাবে বালি তোলার কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত এভাবে বালি তুললে যে কোন সময় সাধারণ মানুষের জীবন সম্পদ ভয়ঙ্কর রকম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। একদিকে যেমন নদীর পাড় ঘেঁষে গভীরতার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে বর্ষার জল ঢুকে জলোচ্ছাস তৈরি করে বাঁধকে প্রবলভাবে আঘাত করবে। মুহূর্তের মধ্যে বাঁধ ভেঙে যাবে। আর তা যদি হয় তাহলে ২০১৮ সালের ক্ষতির সীমাকে অতিক্রম করে তিনগুন হতে পারে। সাংবাদিকদের সরজমিনে সফরের সময় দেখা গেছে কিভাবে পাম্প মেশিন লাগিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। সাংবাদিকদের দেখতেই মেশিন বন্ধ করে নিযুক্ত শ্রমিকরা গা ঢাকা দেয়। ভারি গাড়ির দৌরাত্ম থেকে বাঁচতে এলাকার নাগরিকরা নিজে থেকে বাঁধের দু পাশে খুঁটি পুতেছিলেন যাতে করে ভারি গাড়ি চলাচল করতে না পারে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই পঞ্চায়েত ও মণ্ডল নেতাদের নির্দেশে খুঁটিগুলো উপড়ে ফেলে বালি মাফিয়ারা। স্থানীয় মণ্ডল নেতাকে দৈনিক ২০০০ টাকা কমিশন দিতে হয় বালি মাফিয়াদের এ নিয়ে প্রবল গুঞ্জন রয়েছে মণ্ডল এলাকায়।
বাঁধ নিয়ে এতো উদাসীন কেন প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি থেকে শাসক দলের নতা কর্মীরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন ২০১৮ সালের বন্যায় সাধারণ মানুষ সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্থ হলেও আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে শাসক দলের সিকি আধুলি থেকে বড় নেতাদের। ৩লাখ টাকার সিসি ব্লক ফেলে ৪০ লাখ টাকার বিল তোলা হয়েছে। ৭০ লক্ষ টাকার বাঁশের বিল তুলে নিলেও কৈলাসহরবাসী সেদিন এই বাঁশ চোখে দেখেনি। তাহলে এই বাণিজ্য প্রাপ্তির জন্যই কি বামফ্রন্ট আমলে গড়ে তোলা বাঁধগুলিকে মেরামত করা হচ্ছে না তাই নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে।