কোথাও পুরানো পাম্প হাউস ছিল, ছিল জল সরবরাহের পাইপ লাইন। এমন কি ২০১৭ সালের আগেই এগুলো বসানো হয়েছে। আচমকা দেখা যায় ২০২০ সালে জল জীবন মিশন এর লাখোয়ারী বিজ্ঞাপন। কোথাও ৭০ লক্ষ, কোথাও ৯ লক্ষ। বিনা বাধায় বিনা জটিলতায় পুরনো কাঠামোতে বিজ্ঞাপন বসিয়ে হাওয়া হয়েছে কত কোটি তার হিসাব মেলা ভার।
জল জীবন মিশন প্রকল্পের নামে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত কুমারঘাট পানীয় জল ও জনস্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম ভঙ্গ করে কোটেশনের মাধ্যমে কাজ বরাদ্দ এবং ভূয়ো বিলের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে দপ্তরের নির্বাহী বাস্তুকার কর্ণদাতা জমাতিয়া এবং সহকারী বাস্তুকার অলক দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সব কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কুমারঘাট ডিডব্লিউএস নিয়ম ভেঙে কাজ করেছে কোটেশনের মাধ্যমে। জানা গেছে, কোটেশন পদ্ধতি ২০০৭ সালেই বন্ধ হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মের তোয়াক্কা না করে কাজের নামে ভূয়ো বিল তৈরি এবং সরকারি অর্থের অপব্যবহার চলছে।
বিশেষ অনুমোদন ছাড়াই ফর্ম এলিভেনের মাধ্যমে বরাদ্দের সীমা ছাড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ করানো হয়েছে। অভিযোগ, গ্রামাঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাইপলাইন বসানো হয়নি। সাপ্লাই পয়েন্ট থাকলেও তা পাকা করার কাজ সম্পন্ন না করেই বিল মঞ্জুর করা হয়েছে।
এই দুর্নীতি উন্মোচিত হওয়ার পর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্তে নামে। প্রাথমিক তদন্তে ৫৫ লক্ষ টাকার নয়ছয় ধরা পড়লেও প্রকৃত অঙ্ক প্রায় ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। দোষীদের সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি তাঁদের স্থানে নতুন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় কুমারঘাট এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, জল জীবন মিশনের মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে এ ধরনের দুর্নীতি শুধু সাধারণ মানুষের আস্থা হারাচ্ছে না, বরং সরকারের ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
প্রসঙ্গত, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, গ্রামগুলিতে পাইপলাইন বিহীন সাপ্লাই পয়েন্ট স্থাপন করে কার্যত সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যে দপ্তরের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি এবং এই দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম রোধকরাসম্ভব*হবে। তবে শুধু কুমারঘাটেই নয় এই দুর্নীতি জনস্বাস্থ্য দপ্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সারা রাজ্য জুড়ে। সরকার ঘোষিত পানীয় জলের উৎসের বিস্তার ঘটলেও পানীয় জল যে গ্রাম পাহাড় পাচ্ছে না। শীত কাটলে ফের পানীয় জলের দাবিতে পথ অবরোধ রোজনামচা হয়ে দাঁড়াবে গোটা রাজ্যে। যদি সঠিক তদন্ত হয় তাহলে হয়ত দেখা যাবে রাজ্যের সববৃহৎ কেলেঙ্কারী বা আর্থিক দুর্নীতি জল জীবন মিশনেই হয়েছে কি না তা উত্তর দেবে ভাবীকাল।