‘ভোকাট্টা’সবার শৈশবেই এই শব্দটি এসেছে। এসেছে ঘুড়ি উড়ানোর লড়াইয়ে শব্দ হয়ে। ঘুড়ির প্রান্ত থেকে নাটাইয়ের সূতো এই সূতোই ঘুড়িকে নাচায়, উপরে ওঠায়, আবার ঢেউ খেলায় উপরে নীচে। আবার দুই বন্ধুর ঘুড়ির লড়াইয়ে একটি না একটিকে ভোকাট্টা হয়ে যেতে হয়। ভোকাট্টা মানে সূতো ছিড়ে যাওয়া। আর সূতো ছিড়ে যাওয়া মানে হাত থেকে খসে পড়া। সূতোর বাঁধন মুক্ত হয়ে ঘুড়ি নীল নীলিমায় স্বাধীনভাবে ঘুড়ে বেড়ায়। এই ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব পশ্চিùমবঙ্গে হয় বিশ্বকর্মা পুজোর দিন। উত্তর ভারতে হয় পৌষমাস জুড়ে। এভাবে ভারতের নানা প্রান্তে নানা সময়ে হয়ে থাকে। ত্রিপুরায় ডিসেম্বর মাস জুড়ে। বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতে, যেখানে সদ্য ধান কাটা শেষ হয়েছে, অথবা খেলার মাঠে ঘুড়ি ওড়ানোর আদর্শ জায়গা। মেঘমুক্ত নীল আকাশের বুক ভরে যেত নানা রঙের ঘুড়িতে। কিন্তু প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঘুড়ির সেই রঙিন দিনগুলো আজ বিস্মরণের স্মৃতি। স্মার্টফোন, ভিডিও গেম, আর ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আসক্তি শিশুদের মাঠের খেলাধুলা থেকে ক্রমেই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি শহরাঞ্চলে খোলা জায়গার অভাব এবং গ্রামীণ সমাজে ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ কমে যাওয়াও ঘুড়ি উৎসবের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলেছে।
তবুও ঘুড়ির এই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার সুযোগ এখনো রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ঘুড়ি উৎসব আয়োজন, ßুñলে প্রতিযোগিতা এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টায় নতুন প্রজন্মকে এতে আকৃষ্ট করা সম্ভব। ঘুড়ি শুধু একটি খেলার উপকরণ নয়, এটি শিশুদের সৃজনশীলতা ও শারীরিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আকাশে রঙিন ঘুড়ির উড়ে চলা যেন আমাদের শৈশবের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। তাই এই ঐতিহ্য রক্ষায় আমাদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। হারিয়ে যাওয়া আনন্দের দিনগুলো আবার ফিরিয়ে আনতে হলে আকাশে ঘুড়ি ওড়ার সেই রঙিন দৃশ্যগুলোকে নতুন করে সঞ্চারিত করতে হবে নতুন প্রজন্মের মাঝে।