গত বছর আগস্ট মাসেই শহরবাসীর প্রতিনিধি দল জেলা শাসক ও জল সম্পদ দপ্তরের নির্বাহী বাস্তুকারের কাছে মনু নদীর বাঁধের সংস্কার ও জল নিষ্কাশনের পয়প্রণালী সংস্কার প্রভৃতি চার দফা দাবি জানিয়ে স্মারকপত্র দেন। ২০১৮ সালের দুঃসহ অভিজ্ঞতা শহরবাসী বিশেষ করে বিদ্যানগর, দুর্গাপুর সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। বাঁধের পরিস্থিতি দেখে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে গত বছর আগস্ট মাসে এলাকার নাগরিকরা সভা করে স্মারকলিপি দেবার সিদ্ধান্ত নেন। ডায়েট কলেজে এই বৈঠকে এলাকার নাগরিকদের পাশাপাশি কৈলাসহর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন চপলারাণী দেবরায় এবং ভাইস চেয়ারপার্সন নীতিশ দে উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকেই চার দফা দাবি সনদের সিদ্ধান্ত হয় । দাবিগুলোর মধ্যে ছিল অবিলম্বে শহরের যতগুলি স্লুইস গেট আছে সেগুলোকে সংস্কার করে জল নিষ্কাশন ও বন্যার জল প্রবেশে প্রতিরোধের উপযুক্ত করা। সাইফনকে মেরামত করা। শহরের পয়ঃপ্রণালী অর্থাৎ ড্রেনেজ সিস্টেমকে পরিষ্কার করা। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট নাগরিকদের এক প্রতিনিধি দল ঊনকোটি জেলার জেলা শাসক দিলীপ কুমার চাকমা এবং জলসম্পদ দপ্তরের কৈলাসহর ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সঞ্জয় পালের হাতে চার দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেন। কিন্তু প্রশাসন বা জল সম্পদ দপ্তর এই স্মারকলিপিকে গুরুত্ব না দিয়ে বাস্তবে কলাপাতা হিসেবে রেখে দিয়েছেন।

কেননা প্রায় পাঁচ মাস চলে গেলেও বাঁধ সংস্কার কিংবা জল নিষ্কাশনের পথকে সুগম করতে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরইমধ্যে শীত বিদায় নেবার পালা। তারপরই ঘুর্ণিঝড় তখন বেসামাল হয়ে পড়বে। তখন প্রশাসন কিংবা শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা জানেন না এ সম্পর্কে কোন তথ্য নেই কথাটা বলা যাবে না। তবে এনিয়ে কংগ্রেস দল কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বীরজিৎ সিংহ এই বাঁধ এবং বাংলাদেশে দশ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে তুলেন। শুক্রবার বীরজিৎ সিংহ, গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল
কৈলাসহর এলাকায় মনু নদীর বাঁধের বিভিন্ন অংশ সরজমিনে পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখেন। কোন কোন জায়গায় প্রায় পাঁচ ফুটের মতো বাঁধ নীচে নেমে গেছে। কৈলাসহরে মনু নদীর বাঁধ সংস্কার করা এবং বাংলাদেশে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে কংগ্রেস বিক্ষোভ আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়েছে। সকাল ১০ টায় বিমানবন্দর কাছে কৈলাসহর ধর্মনগর সড়ক অবরোধে বসবে কংগ্রেস। দুপুর বারোটায় বাংলাদেশের বাঁধ নির্মানের প্রতিবাদে লং মার্চে হাঁটবে কংগ্রেস নেতা কর্মীরা।

বাঁধ পরিদর্শন শেষে বিধায়ক বীরজিৎ সিংহ সংবাদ প্রতিনিধিদের জানান যে, রাজ্য সরকারের উচিত খুব শীঘ্রই কৈলাসহরের মনু নদীর বাঁধের সংস্কার কিংবা পুননির্মানের কাজ শুরু করা। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু না করলে আসন্ন বর্ষায় কৈলাসহর জলের নীচে থাকবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাছাড়াও বিধায়ক আরও গুরুতর অভিযোগ করেন যে, বাঁধের পাশে স্লুইস গেইটগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে স্লুইস গেইটগুলো বিকল হয়ে রয়েছে। স্লুইস গেইটগুলো দিয়ে জল নিষ্কাশন হয় না। প্রায় চল্লিশ বছর পূর্বে কৈলাসহরের মনু নদীর পাড়ে বাঁধ এবং স্লুইস গেইট গুলো নির্মান করা হয়েছিলো। এরপর আর কোনো দিনই এগুলো সংস্কার করা হয়নি। এমনকি বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো আধিকারিক বাঁধ পরিদর্শন করেন নি দীর্ঘদিন ধরে। দপ্তরের আধিকারিকদের উদাসীনতার কারনেই মনু নদীর পাড়ের বাঁধ এত শোচনীয় হয়ে রয়েছে। বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা আরও জানান যে, কৈলাসহর মহকুমায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধ এবং স্লুইস গেইট গুলো সংস্কার কিংবা পুননির্মাণ করার দাবীতে আগামীকাল ২৫জানুয়ারি কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে সকাল দশটায় কৈলাসহর-কুমারঘাট রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হবে এবং কৈলাসহরের রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশে বাংলাদেশ সরকার অবৈধভাবে যে বাঁধ নির্মাণ করছে তার প্রতিবাদে দুপুর বারোটায় দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের উদ্দেশ্যে টিলাবাজার থেকে কংগ্রেস দল লং মার্চ শুরু করবে ।